1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিষেকের বিরুদ্ধে কেন শক্তিশালী প্রার্থী দিলো না বিরোধীরা?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র নিয়ে তুমুল আগ্রহ ছিল। তবে নওশাদ সিদ্দিকি লড়াইয়ে না নামায় তাতে ভাটা পড়েছে।

https://p.dw.com/p/4fB6u
ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের বিশাল কাট আউট।
অভিষেকের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রার্থী দেয়নি কোনো বিরোধী দলই। ছবি: Satyajit Shaw/DW

পয়লা জুন সপ্তম দফায় ডায়মন্ড হারবারে ভোট। দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই কেন্দ্রে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক গত দুবার জয়ী হয়েছেন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে জয়ের ব্যবধান ছিল বিপুল। 

নজরে ডায়মন্ড হারবার

এক সময় ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল বামেদের। ২০০৪ সালে সেখান থেকে শেষবার জেতেন সিপিএম প্রার্থী শমীক লাহিড়ী। ২০০৯ থেকে এই আসনটি তৃণমূলের দখলে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে এখানে প্রথমবার ভোটে লড়েন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ৭১ হাজার ভোটে তিনি পরাজিত করেন নিকটতম সিপিএম প্রার্থীকে।

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে অভিষেক অনেকটা এগিয়ে যান। নিকটতম বিজেপি প্রার্থীকে ৩ লক্ষ ২১ হাজার ভোটে পরাজিত করেন তিনি। এবার তিনি আরও বেশি ভোটে জয় পাবেন বলে দাবি করছে ঘাসফুল। শাসক শিবিরের এই আত্মবিশ্বাসে কিছুটা ঘা দিয়েছিলেন নওশাদ।

নওশাদের ডিগবাজি

গত বছর নভেম্বরে আইএসএফ বিধায়ক নিজেই ঘোষণা করেন, তিনি ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়তে চান। নওশাদ এই ঘোষণা করার পর, বাম, কংগ্রেস তো বটেই, এমনকি বিজেপিও তার প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। এরপর একাধিকবার বিভিন্ন মঞ্চে একই ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেছিলেন হুগলির ফুরফুরা শরীফের এই পীরজাদা।

ডায়মন্ড হারবারে প্রচার করছেন অভিজিৎ দাস।
অভিষেকের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস। ছবি: Satyajit Shaw/DW

কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার সময় দেখা গেল, ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রটি আইএসএফের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে। প্রথম দুটি দফায় এই কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। নওশাদের উপর চাপ বাড়তে থাকে। তরুণ নেতা কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিয়ে বলেন, অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়তে তিনি প্রস্তুত, যদি দল অনুমোদন দেয়!

নিজের মুখে অভিষেককে হারানোর চ্যালেঞ্জ দিয়ে, লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে চলে গিয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক। দল অনুমোদন দেয়নি, নাকি নওশাদ নিজেই লড়তে চাননি, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। 

এই কেন্দ্রে আইএসএফের টিকিটে ভোটে লড়বেন মজনু লস্কর। তিনি ডিডব্লিউকে বলেন, "গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকায় দর্জির কর্মীরা কাজ পাচ্ছেন না। বাইরের ক্রেতা এলে শাসক দলের গুন্ডারা তোলা তুলছে। ফলতা ইকোনমিক জোন মুখ থুবড়ে পড়েছে। মানুষের কাজ নেই। তার উপর সন্ত্রাস। পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। প্রার্থী যেই হোন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনতা রায় দেবে।"

প্রচার করছেন প্রতীক উর রহমান।
ডায়মন্ড হারবারে সিপিএম প্রার্থী প্রতীক উর রহমান। ছবি: Satyajit Shaw/DW

বিজেপির বিলম্ব

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩টি আসনে ভোট নেয়া হবে। এর মধ্যে ৪০০টি আসন পাওয়ার দাবি করছে যে বিজেপি, তারা দীর্ঘদিন ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণাই করতে পারেনি। একের পর এক তালিকা বেরিয়েছে, কিন্তু তাতে অভিষেকের কেন্দ্রটি ছিল না।

রাজনৈতিক মহলে জোর জল্পনা চলছিল, 'ওস্তাদের মার শেষ রাত্রের' মতোই কোনো জাঁদরেল প্রার্থী নিয়ে অভিষেকের বিরুদ্ধে ময়দানের নামতে চলেছে বিজেপি। তাদের ঘোষণায় চমক থাকবে বলেই কিছুটা সময় লাগছে। 

কিন্তু শেষমেষ দেখা গেল, তারকা তো দূরের কথা, কোনো হেভিওয়েট নেতা নয়, অভিষেকের বিরুদ্ধে পদ্ম শিবির টিকিট দিয়েছে এর আগে ভোটে পরাজিত, জেলার নেতা অভিজিৎ দাসকে।

২০১৪ সালে অভিষেকের বিরুদ্ধে ভোটে লড়েছিলেন অভিজিৎ। দুই লক্ষের কিছু বেশি ভোট পেয়ে সিপিএমের পরে তৃতীয় স্থানে ছিলেন। যদি অভিজিতের নামই ঘোষণা করতে হত, তাহলে এত দেরি করা হল কেন, এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বকে।

অভিজিৎ বলেন, "আমাদের কর্মীরা প্রস্তুত আছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য। ওরা সন্ত্রাস করলে মানুষ রুখে দাঁড়াবে। এখানে নীতির লড়াই বড়। কোন কেন্দ্রে কে প্রার্থী, সেটা বড় নয়। নরেন্দ্র মোদীকে আবার প্রধানমন্ত্রী করার জন্য দেশের মানুষ ভোট দেবেন। সেখানে বিজেপির বিরুদ্ধে কে প্রার্থী, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ নয়।"

সিপিএমের তারুণ্য

সিপিএম ও কংগ্রেসের সঙ্গে আইএসএফের নির্বাচনী বোঝাপড়া ভেস্তে গিয়েছে। ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে সিপিএম টিকিট দিয়েছে তরুণ নেতা প্রতীক উর রহমানকে। ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সাবেক রাজ্য সভাপতি প্রতীক।

‘এই লড়াইয়ে অভিষেকের জয় প্রায় নিশ্চিত’

গ্রামে গ্রামে ঘুরে হেঁটে প্রচার করছেন তরুণ মুখ। অভিষেক যে ডায়মন্ড হারবার মডেলের কথা বলেন, তার বিরুদ্ধে কথা বলছেন তিনি। নিজেদের উদ্যোগে বার্ধক্য ভাতা বিতরণ থেকে ফুটবলের মাধ্যমে জনসংযোগ কিংবা রক্তদান শিবির, বিভিন্নভাবে ডায়মন্ড হারবার নজর কেড়েছে। সেটাকেই মডেল বলে তুলে ধরেছেন অভিষেক।

প্রতীক ডিডব্লিউকে বলেন, "মডেলের নামে উনি এখানে সুশাসন, নয় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। সেটাই সারা রাজ্যের মডেল।"

প্রতীকের ভাষায়, "এখানকার সব পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। কোনো বিরোধী সদস্য নেই বললেই চলে। তাহলে ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার টাকা কেন গরিব মানুষকে দেয়া হল না? গ্রামের পর গ্রামে পানীয় জল নেই, জল কিনে খেতে হয়। মহিলারা বলছেন, তাদের জল সরবরাহের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।"

নওশাদ এই কেন্দ্রে লড়ছেন না। বাম, কংগ্রেস, আই এস এফ সংযুক্ত প্রার্থীকে দাঁড় করাতে পারেনি। ফলে অভিষেকের কাছে এই কঠিন নির্বাচনে আসন ধরে রাখা সহজ হয়ে গিয়েছে বলে পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র ডিডব্লিউকে বলেন, "নওশাদের জন্য এখানে বিরোধী তৃতীয় ফ্রন্ট অপেক্ষা করছিল। কিন্তু তিনি ভোটেই লড়লেন না। কলকাতার টিভি চ্যানেলে যাদের মুখ দেখা যায়, বিজেপি তাদের কাউকে প্রার্থী করলে জনতা খুশি হত। সিপিএম তরুণ মুখকে প্রার্থী করেছে। এই লড়াইয়ে অভিষেকের জয় প্রায় নিশ্চিত। দ্বিতীয় স্থানে কে থাকবেন, সেটার দিকে নজর থাকবে।"